পাসপোর্ট হলো একজন নাগরিকের জাতীয়তা ও পরিচয় প্রমাণকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য এবং এতে ধারকের নাম, ছবি, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু তারিখ ও মেয়াদ উল্লেখ থাকে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (MRP) পরিবর্তে এখন ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (e-passport) ইস্যু করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও ব্যবহারকারী-বান্ধব, যা ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যায়। তবে, আবেদন করার আগে নিয়ম, খরচ ও ডেলিভারি সময় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
একবার আবেদন জমা দেওয়ার পর ভুল তথ্য সংশোধন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে শুধুমাত্র একবারই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়।
ই-পাসপোর্ট করার ধাপসমূহ
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
১. অনলাইনে আবেদন করা।
২. সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান।
ধাপ ১: অনলাইনে আবেদন
- প্রথমে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.epassport.gov.bd) গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন।
- সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- আবেদন ফি অনলাইনে জমা দিন।
ধাপ ২: বায়োমেট্রিক ও ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন
- আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং সিগনেচার প্রদান করতে হবে।
- এরপর আপনার আবেদন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।
ই-পাসপোর্ট প্রসেসিং সময় ও ডেলিভারি
সাধারণত, নিয়মিত আবেদন প্রক্রিয়ায় ১৫-৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে দ্রুত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- আবেদন করার আগে সব তথ্য সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করুন।
- একবার আবেদন জমা দিলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকে না।
- পাসপোর্ট ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে যান।
ই-পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা এখন অনেক সহজ। নিচে ধাপে ধাপে আবেদন করার প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:
- বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টাল ভিজিট করুন
ওয়েবসাইটের লিংক: www.epassport.gov.bd - “অ্যাপ্লাই অনলাইন (Apply Online)” এ ক্লিক করুন
আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে Apply Online অপশনে ক্লিক করুন। - নির্দেশাবলী অনুসারে ফরম পূরণ করুন
সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করুন। যেকোনো ভুল তথ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন। - আবেদন ফি পরিশোধ করুন
নির্ধারিত ফি অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করুন। - ছবি তোলার ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন
ফরম জমা দেওয়ার পর আপনার সুবিধামতো একটি তারিখ ও সময় নির্ধারণ করুন। - নির্ধারিত তারিখে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন
পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ এবং সিগনেচার প্রদান করুন। - পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ সংগ্রহ করুন
বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া শেষ হলে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হবে।
- কারো সাহায্য ছাড়াই ই-পাসপোর্ট (e-passport) করার সহজ পদ্ধতি
- ই-পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন কিভাবে করতে হয়
এভাবে ধাপগুলো অনুসরণ করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন সম্পন্ন করা যায়। সময়মতো ডেলিভারি স্লিপ এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ ও ফি পরিশোধ করার পরে ছবি তোলা এবং আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় নিচের ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে নিতে হবে:
অনলাইন আবেদন কপি
- পাসপোর্ট আবেদন ফরমের প্রিন্টেড কপি
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট
ঠিকানার প্রমাণ (যেকোনো একটি)
- বিদ্যুৎ বিলের কপি (আপনার বর্তমান ঠিকানার জন্য)
- গ্যাস বিল
- পানি বিল
- টেলিফোন বিল
- সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদ
পরিচয়পত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে)
অন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ২ কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষ ডকুমেন্ট
- জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
- পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
পাসপোর্ট অফিসে করণীয়
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মূল কপি এবং ফটোকপি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হন।
- আপনার সিরিয়াল অনুযায়ী বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষর) প্রদান করুন।
- বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হওয়ার পরে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ সংগ্রহ করুন।
মনে রাখা জরুরী
- সব তথ্য আপডেট এবং সঠিক থাকতে হবে।
- অনলাইন ফরমে দেওয়া তথ্যের সাথে কাগজপত্রের তথ্য মিল থাকতে হবে।
- একবার আবেদন জমা দেওয়ার পর তথ্য সংশোধন করার সুযোগ নেই।
- ভুল তথ্যের কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে।
ডেলিভারি প্রসেস
বায়োমেট্রিক ও ভেরিফিকেশন শেষ হলে পাসপোর্ট প্রসেসিংয়ে যাবে। এরপর:
- পুলিশ ভেরিফিকেশন ও অন্যান্য যাচাই-বাছাই হবে।
- পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছাবে।
- আপনার মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ডেলিভারি স্ট্যাটাস জানানো হবে।
- অনলাইনে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করে ডেলিভারি নিশ্চিত করুন।
- ডেলিভারি স্লিপ জমা দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
আরো জানুনঃ