নতুন ই-পাসপোর্টের আবেদন করার পর থেকে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। এর মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা যত দ্রুত সম্পন্ন হলে দ্রুত আপনার পাসপোর্টের অনুমোদন হবে এবং পাসপোর্টের কপি দ্রুত হাতে পাওয়া সম্ভব হবে। সাধারণত, ই-পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি, ভেরিফিকেশনের সময় কী কী করণীয় এবং এর জন্য কোনো ফি প্রযোজ্য কিনা, কি কি কাগজপত্র দিতে হবে তা নিয়েও তথ্য প্রদান করা হবে।
ePassport ।। পুলিশ ভেরিফিকেশন কি ?
পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন ব্যক্তির প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করার দায়িত্বে থাকে পুলিশ। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে, স্থানীয় থানার একজন এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) আবেদনকারীর নিম্নলিখিত কিছু বিষয় যাচাই করে থাকেন-
- আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক কিনা (জাতীয়তা যাচাই)
- আবেদনকারীর স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা
- কর্মসংস্থানের তথ্য
- পারিবারিক অবস্থা
- আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা রয়েছে কি না
যদি পূর্বে কোনো মামলা থেকে থাকে, তবে সেই মামলার অবস্থা এবং খারিজ হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হয়।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনে কী কী লাগে
পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। যেখানে আবেদনকারীর সক্রিয় ভূমিকা খুবই সীমিত। স্থানীয় থানার নির্ধারিত পুলিশ কর্মকর্তা আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করেন। এই যাচাই প্রক্রিয়ার সময় আবেদনকারীর সততা এবং পরিচয় যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিক সনদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি চাওয়া হতে পারে। যেসকল কাগজপত্র চাওয়া হতে পারে তা নিচে দেওয়া হলো-
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- নাগরিক সনদপত্র
- বিদ্যুৎ বিল/টেলিফোন বিল/ পানি বিলের কাগজ
- পিতা এবং মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র কপি
- পেশা প্রমানের প্রত্যয়নপত্র (যদি থাকে)
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে কত সময় লাগে?
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে আপনার পাসপোর্ট প্রাপ্তি সহজতর হয়। যদিও সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হতে ১৯-২০ দিন সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় থানার পুলিশ আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করে থাকে, এবং তার ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রেরণ করে।
আপনার পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হলে অনলাইনে পাসপোর্টের প্রগ্রেস চেক করতে পারেন। যদি আপনার অনলাইন স্ট্যাটাসে কোন আপডেট না পাওয়া যায় এবং দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়, তাহলে ‘Hello SB’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে থানার এসআই বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন।
এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কখনো কখনো সরাসরি থানার সাথে যোগাযোগ করাও কার্যকর হতে পারে। তবে, ভেরিফিকেশনের সময় কোন অসঙ্গতি পাওয়া গেলে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হতে পারে। অতএব, সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ
ই-পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনি যখন পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে যাবেন, তখন “Enrolment Pending SB Police Verification” মেসেজটি দেখতে পারেন। এর অর্থ, আপনার পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন এখনো অপেক্ষমাণ।
সাধারণত, স্থানীয় থানার একজন এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) পাসপোর্ট আবেদনের ২ থেকে ৪ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি আপনার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য জিজ্ঞাসা করতে পারেন বা সরাসরি থানায় দেখা করতে বলবেন। এ সময় আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে যেতে হবে। যেমনঃ
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে, যারা পাসপোর্ট রিনিউ করবেন তাদের জন্য)
- নাগরিক সনদ
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- বিদ্যুৎ বিলের কাগজ (যদি থাকে)
- পূর্বে কোনো মামলা থাকলে, সেই মামলার খারিজ সংক্রান্ত নথি
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য করণীয়:
- সঠিক তথ্য প্রদান: পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আপনার সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল বা অস্পষ্ট তথ্য দিলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে বা বাতিলও হতে পারে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা: পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখতে হবে। কাগজপত্রে কোনো ঘাটতি থাকলে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
- সহযোগিতা করা: পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশের সাথে যথাযথ সহযোগিতা করা জরুরি। তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করলে প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় কোনো অর্থ প্রদানের প্রয়োজন হয় না। যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা অর্থ দাবি করেন, তবে সেটি এড়িয়ে চলা উচিত। তবে, কেউ কেউ প্রক্রিয়াটি দ্রুত করতে ঘুষ প্রদান করে থাকেন, যা আইনগতভাবে সঠিক নয় এবং তা সুপারিশও করা হয় না। এছাড়াও প্রতারক চক্র হতে সাবধান থাকতে হবে। ঘুষ দেওয়া এবং প্রতারক থেকে সাবধান করতে বাংলাদেশ পুলিশ পাসপোর্ট শাখার স্পেশাল ব্রাঞ্চ একটি চিঠি ইস্যু করেছে, যা নিচে দেওয়া হলোঃ
ই-পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনার শেষ কথা
ই-পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াটি যতই জটিল মনে হোক, সঠিকভাবে সকল ধাপ অনুসরণ করলে এটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। সঠিক তথ্য প্রদানসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা রাখা এবং পুলিশের কাজে সহযোগিতা করলে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজেই সম্পন্ন হয়। যদিও সাধারণত ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না, তবে যদি কোনো অসুবিধা দেখা দেয়, আবেদনকারী সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বা অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
ই-পাসপোর্ট পাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং স্বচ্ছ করার জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে এখন এটি আরও সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী হয়েছে।
পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহ – FAQ
পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে কতদিন লাগে?
সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন হলে, এটি ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের কতদিন পর পাসপোর্ট পাওয়া যায়?
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট ঢাকায় পৌঁছানোর পর, চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। এরপর, পাসপোর্ট প্রিন্টিং এবং ডেলিভারি প্রক্রিয়া শেষ হতে সাধারণত আরও ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। সব মিলিয়ে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর ৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেতে পারেন।
ই-পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সাধারণত কোনো টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না। এখানে আবেদনকারীর সক্রিয় ভূমিকা খুবই সীমিত। তবে, কিছু ক্ষেত্রে যদি ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে কেউ কেউ নির্ধারিত কর্মকর্তার ওপর অর্থ খরচ করে কাজটি দ্রুত করার চেষ্টা করেন। তবে এটি আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং সুপারিশ করা হয় না।