🔨 মে দিবস মানেই শ্রমিকের অধিকার, ন্যায্য মজুরি আর সম্মানের লড়াই
প্রতিটি বছর যখন ১লা মে আসে, তখন আমি মনে করি—আমরা কেবল ছুটি কাটাতে নয় বরং কিছু গভীর কথা মনে রাখার জন্য একত্র হই। এই দিনটি আমাদের শেখায় যে, এক সময় শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কাজের ন্যায্য দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, লাঠির বাড়ি-বন্দুকের গুলি খেয়েছেন, এমনকি প্রাণ দিয়েছেন। অথচ আজ আমরা যারা অফিস, দোকান, কারখানা বা ফিল্ডে কাজ করি, তাদের অনেকেই এই ইতিহাস জানি না বা জানলেও গুরুত্ব দিই না।
🏭 মে দিবসের ইতিহাস: শুরুটা কোথা থেকে?
মে দিবসের সূচনা হয়েছিল ১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। তখনকার দিনে শ্রমিকদের দৈনিক ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো, তাও অমানবিক পরিবেশে। তাদের একটাই দাবি ছিল—
“৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম, ৮ ঘণ্টা নিজের জন্য”।
এই দাবিকে ঘিরে শুরু হয় হে মার্কেট আন্দোলন, যার পরিণতিতে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক প্রাণ হারান। সেই রক্তের ইতিহাস আজকের মে দিবস।
🌍 সারা বিশ্বের শ্রমিকদের একতা
১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বিশ্বের নানা দেশে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে—কখনো উৎসবের মতো, আবার কখনো প্রতিবাদের দিন হিসেবে।
বাংলাদেশে মে দিবসের আগমন
আমাদের দেশ বাংলাদেশেও মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই এ দিনটি গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করা হচ্ছে। আজ দেশের প্রতিটি শ্রমিক, দিনমজুর, গার্মেন্টস কর্মী কিংবা রিকশাচালক—সবাই একসঙ্গে এই দিনে তাদের অধিকারের কথা বলেন, সংগঠিত হন।
🌱 ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য: পরিবর্তনশীল জলবায়ু ও শ্রমিক নিরাপত্তা
“Ensuring Safety and Health at Work in a Changing Climate”
এই প্রতিপাদ্যটি মনে করিয়ে দেয় যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শ্রমিকরা আজ নতুন ধরনের ঝুঁকিতে পড়ছে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ, অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এসবের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে শ্রমিকদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
🙏 আমার অনুভব
আমি বিশ্বাস করি, মে দিবস কেবল ইতিহাস মনে রাখার দিন নয়। এটা হচ্ছে—নিজেকে প্রশ্ন করার দিন:
- আমি কি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার দিতে পারছি?
- আমি নিজে কি সম্মানের সঙ্গে কাজ পাচ্ছি?
- সমাজ কি সত্যিকার অর্থে শ্রমিকবান্ধব?
আমরা যারা এই ব্লগ পড়ছি, আমাদের সবার দায়িত্ব এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া—শ্রমিক মানেই শুধু একজন কাজের লোক নয়, তিনি আমাদের দেশের চালিকাশক্তি।
📢 সবশেষে বলবো আমি…
মে দিবস আমাদের শেখায়—সম্মিলিত কণ্ঠ কখনো নীরব হয় না। আজকের তরুণ সমাজ, ফ্যাক্টরি মালিক, উদ্যোক্তা, এমনকি সাধারণ মানুষ—সবার উচিত শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের সম্মান দেওয়া এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।
শুভ মহান মে দিবস ২০২৫।
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সকল পরিশ্রমী মানুষদের প্রতি।