জমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার ক্ষেত্রে জমির মালিকানা বের করা খুব বেশি প্রয়োজন। আপনার হয়তো এমন কোনো জমি রয়েছে যা আপনি এখনো জানেন না। অথবা আপনার বাপ-দাদার সম্পত্তি রয়েছে যা এখনও জানেন না। সেক্ষেত্রে সেই জমির মালিকানা কার নামে রয়েছে তা জানাটা জরুরি। আর এজন্য জমির মালিকানা বের করার উপায় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জমির মালিকানা নিশ্চিত করলেই আপনি জানতে পারবেন আপনার জমিটি কার নামে নিবন্ধিত রয়েছে।
জমি ক্রয়-বিক্রয়, রেকর্ড অনুসন্ধান, রেকর্ড সংশোধন, জমির পরিমাণ এবং সীমানা নির্ধারণের মতো বিষয়গুলোতে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য জমির মালিকানা বের করা প্রয়োজন। আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাকে জমির মালিকানা বের করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আমি আশা করছি।
বর্তমানে ভূমি সংক্রান্ত সকল পরিষেবা ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত, যার ফলে জমির মালিকানা বের করাটা এখন অনেক সহজ। তাহলে কিভাবে জমির মালিকানা বের করবেন, তা জানতে চলুন পরবর্তী অংশে আগানো যাক –
জমির মালিকানা কেন বের করা প্রয়োজন?
আপনার অজান্তেই কোথাও যদি আপনার নামে অথবা আপনার বাবা-মায়ের নামে কোনো জমি থেকে থাকে অথবা আপনি যদি নতুন জমি কিনতে চান, তাহলে অবশ্যই জমির আসল মালিকানা সম্পর্কে জানা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জমিজমা নিয়ে প্রতারণা আজকাল একটা মামুলি ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক সময় জমির নকল মালিক সেজে অন্যের জমি বিক্রির চেষ্টা করা হয়।
আবার আপনার নিজের জমি যদি অন্য কেউ বেআইনিভাবে দখল করে বা নিজের নামে প্রচার করে, তাহলে সেটি শনাক্ত করাও জরুরি। আর এসব কারণে জমির প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
জমির মালিকানা বের করার উপায়
জমির মালিকানা বের করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। আপনি যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেই জমির মালিকানা বের করতে পারেন। তবে বর্তমানে জমির মালিকানা বের করার কাজটি দুইভাবে করা যায়ঃ
- অনলাইনের মাধ্যমে।
- সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে।
আগে শুধুমাত্র ভূমি অফিসে গিয়েই জমির মালিকানা সম্পর্কে জানা যেত। তবে, এখন আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে জমির মালিকানা বের করা যায়। নিচে উভয় পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার নিয়ম
বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজে জমির মালিকানা বের করা যায়। এটি করতে আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলোঃ
ধাপ ১ঃ
প্রথমে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ভূমি তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
ধাপ ২ঃ
ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর কয়েকটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে ভূমি সংক্রান্ত সেবার মধ্যে “ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ” অপশনে ক্লিক করুন। ‘নামজারি খতিয়ান’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ
‘নামজারি খতিয়ান’ অপশনে ক্লিক করার পর একটি টেবিল দেখতে পাবেন। এখানে ধাপে ধাপে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং খতিয়ান নম্বর বাছাই করতে হবে।
- যদি খতিয়ান নম্বর খুঁজে না পান, তাহলে উপরের সার্চ বারে তথ্য দিয়ে সরাসরি অনুসন্ধান করুন।
ধাপ ৪ঃ
এরপর ‘অধিকতর অনুসন্ধান’ অপশনে ক্লিক করুন।
- এই পর্যায়ে মালিকের নাম ও দাগ নম্বর দিতে হবে।
- তথ্য দিয়ে আবার ‘অধিকতর অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫ঃ
আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক হলে খতিয়ানের তথ্য সামনে আসবে।
- খতিয়ান পুরো দেখতে চাইলে ‘বিস্তারিত’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬ঃ
খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য দেখতে পেলে সেটি সংগ্রহ করতে ‘খতিয়ান আবেদন’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭ঃ
এরপর আপনাকে NID নম্বর, জন্ম তারিখ এবং একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। তথ্য পূরণ হলে ‘যাচাই করুন’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৮ঃ
এখন আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে:
- আপনি অনলাইন কপি নেবেন, যা তাৎক্ষণিক পাওয়া যাবে।
- অথবা সার্টিফাইড কপি, যা পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
ধাপ ৯ঃ
যে কোনো কপির জন্য ১০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে।
ধাপ ১০ঃ
সফলভাবে পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আপনার অনলাইন কপি বা সার্টিফাইড কপির তথ্য দেখতে পাবেন।
- এই কপিটি পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
আরো জানুনঃ
- ভূমির ডিজিটাল সার্ভে: সামাজিক অস্থিরতা দূর
- জন্ম নিবন্ধন যাচাই করুন (Birth Certificate Check)
- নতুন ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগে
সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে জমির মালিকানা যাচাই
অনলাইনের পাশাপাশি, আপনি সরাসরি স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়েও জমির মালিকানা যাচাই করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং নির্ভরযোগ্য। তবে এজন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঙ্গে রাখতে হবে।
কী কী তথ্য প্রয়োজন হবে?
- বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নং।
- খতিয়ান নম্বর।
- জমির দাগ নম্বর এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য।
এই তথ্যগুলো ভূমি অফিসে জমা দিলে তারা জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে আপনাকে জানাবে। আপনার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি বের করতেও এই পদ্ধতি কার্যকর হবে।
জমির মালিকানা যাচাই করা জরুরি কেন?
১. প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া:
জমি কেনার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে যিনি মালিক হিসেবে দাবি করছেন, তিনি সত্যিই জমির প্রকৃত মালিক কি না।
২. ওয়ারিশের জমি সুরক্ষিত রাখা:
দাদা-দাদী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি অনেক সময় বেনামে অন্য কেউ ভোগ দখল করে। জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে এই ধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
৩. ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো:
জমি নিয়ে যেকোনো বিরোধ বা জটিলতা এড়াতে জমির মালিকানা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আশা করি যে, আপনি জমির মালিকানা বের করার গুরুত্ব এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। অনলাইন পদ্ধতি ও সরাসরি ভূমি অফিসের পদ্ধতি—দুইটি পদ্ধতিই ব্যবহার করে আপনি জমির প্রকৃত মালিকানা বের করতে পারেন। যা আমি বিস্তারিত বলে দিয়েছি।