জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক সেবা। জন্ম নিবন্ধন সনদ (Birth Certificate) শিশু জন্মের পর পরই নিশ্চিত করা হলে তার নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে তা দিয়ে NID, পাসপোর্ট, শিক্ষাসহ নানা সরকারি সেবা গ্রহণ সহজ হয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখন আরো সহজ ও দ্রুত হয়েছে, যা নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
জন্ম সনদ কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়? | Uses of Birth Certificate
জন্ম সনদ ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ | Uses of Birth Certificate:
- ব্যাংক হিসাব খোলা | Opening a Bank Account
- আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স প্রাপ্তি | Import and Export License
- গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি | Utility Connections
- ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রাপ্তি | Tax Identification Number (TIN)
- ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি | Contractor License
- বাড়ির নক্সার অনুমোদন প্রাপ্তি | Building Plan Approval
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তি | Vehicle Registration
- ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি | Trade License
- টিকাদান কর্মসূচীসহ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি | Vaccination & Healthcare Services
- স্থানীয় সরকার থেকে যে কোন সেবা প্রাপ্তি | Local Government Services
- সরকার নির্ধারিত অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে | Other Government Services
প্রতিটি ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বা Birth Certificate একটি অপরিহার্য নথি হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ
পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন করা না থাকলেও কি সন্তানের জন্য নিবন্ধন করা যাবে? | Child Birth Registration Without Parent’s Birth Certificate
হ্যাঁ – সন্তানের জন্ম নিবন্ধন (Child Birth Registration) করার সময় পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর (Parents’ Birth Registration Number) বাধ্যতামূলক, যদি সন্তানের জন্ম ২০০০ সালের পর হয়ে থাকে। তবে ২০০০ সালের পূর্বে জন্ম নেওয়া সন্তানের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রয়োজন নেই। সরকার ২০০০ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রতিটি সন্তানের জন্য পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যেখানে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে শুধুমাত্র শিক্ষা সনদ (Educational Certificate) বা জাতীয় পরিচয়পত্র (National ID) থাকলেই তাদের জন্ম নিবন্ধন করা সম্ভব।
সন্তানের জন্ম নিবন্ধন আইন ২০২৪ | Child Birth Registration Act 2024
সন্তানের জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক সময় পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন (Parents’ Birth Registration) পাওয়া যায় না, যা অনেক অভিভাবককে শিশু জন্ম নিবন্ধন (Children Birth Registration) থেকে বিরত রাখে। এই সমস্যার সমাধানে, পিতা-মাতার জন্য শুধু বয়স প্রমাণপত্র (যেমন শিক্ষা সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র) থাকলেই তাদের জন্ম নিবন্ধন সম্ভব। এতে পিতা-মাতার নিবন্ধন সহজ হয়ে যায় এবং এটি সমস্যা না দেখে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ (Birth and Death Registration Act 2004) অনুসারে, জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এই আইন লঙ্ঘন করলে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনটি ১৯টি ক্ষেত্রে আবশ্যক, যেমন বিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির নিয়োগ, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদির জন্য। আবার, মৃত্যু নিবন্ধনও জন্ম নিবন্ধন ছাড়া করা যাবে না। তাই, অভিভাবকদের নিবন্ধনে আগ্রহী করার জন্য আইনটি সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ‘ফ্যামিলি ট্রি’ (Family Tree) পদ্ধতির মাধ্যমে পিতা-মাতার নিবন্ধন নম্বর সন্তানদের জন্ম নিবন্ধনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত, যা ভবিষ্যতে ‘পপুলেশন রেজিস্টার’ (Population Register) প্রণয়নে সহায়ক হবে। ফ্যামিলি ট্রি-র মাধ্যমে উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয় এবং বয়স ও অন্যান্য তথ্যের অনৈতিক পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব হয়।
এভাবে শিশু জন্ম নিবন্ধন ও পিতা-মাতার নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে অবগত হলে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে অভিভাবকেরা সহজে নিবন্ধন করতে পারবেন।