অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকলেই নতুন ভোটার হওয়া যায়। এছাড়াও নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি, নাগরিক সনদ প্রয়োজন হয়। নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই হতে পারবেন নতুন ভোটার।
নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ লাগে এবং আবেদন প্রক্রিয়া কি তা জানাবো আজকের এই পোস্টে। যারা নতুন ভোটার হতে চান তাদের মনে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে ভোটার হতে কি কি লাগে? আজকের এই ব্লগের পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড করতে কি কি কাগজপত্র লাগে।
বাংলাদেশী একজন নাগরিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আইডি হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাই একজন প্রকৃত নাগরিক কিনা তা যাচাই করে নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। দেশে রোহিঙ্গা ইস্যূর কারনে অনেক উপজেলাতে প্রয়োজনের বাইরেও অতিরিক্ত কাগজপত্র চাওয়া হয় নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে। আর এজন্য উক্ত অফিসে গিয়ে জেনে নিতে হবে অতিরিক্ত কাগজপত্রের চাহিদাগুলো।
তো চলুন, কথা না বাড়িয়ে জানা যাক, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়।
নতুন ভোটার নিবন্ধন ২০২৪
নতুন ভোটার নিবন্ধন অর্থাৎ এনআইডি কার্ড করার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক।
- প্রথমতঃ বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- দ্বিতীয়তঃ ১৮ বছর পূর্ন হতে হবে
- তৃতীয়তঃ পূর্বে ভোটার তালিকায় নাম থাকা যাবে না
- চতুর্থতঃ অপ্রকৃস্থ বা পাগল হওয়া যাবে না
বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে প্রমাণ হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু ডকুমেন্ট থাকে। যেমনঃ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ, পিতা/মাতা জাতীয়তা এবং আইডি কার্ড। এছাড়াও ঠিকানা প্রমাণের জন্য Utility বিলের কপি/জমির খাজনা রশিদ/ Holding Tax রসিদ অথবা চেয়ারম্যান বা কমিশনারের প্রত্যয়ন থাকে।
নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে
নতুন ভোটার হতে বা ভোটার আইডি কার্ড করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার NID, নাগরিক সনদ, রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার কাগজ, বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ টেলিফোন বিলের কপি, জমির খাজনা রশিদ বা বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন।
নতুন এনআইডি (NID) করতে যা যা লাগবে নিচে লিস্ট আকারে দেওয়া হলো-
- জন্ম নিবন্ধন ফটোকপি
- পিতা ও মাতার এনআইডি
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি (যদি থাকে)
- স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কপি (বিবাহিতদের জন্য)
- কাবিননামার ফটোকপি (বিবাহিতদের জন্য)
- পূর্বে ভোটার হই নাই মর্মে অঙ্গীকার নামা।
- মেয়র/চেয়ারম্যান/ কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব/চারিত্রিক সনদপত্র
- রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার রিপোর্ট
- ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ বিল/পানি বিল/গ্যাস বিল)
- ট্যাক্স/কর পরিশোধের রশিদের ফটোকপি
এছাড়াও এনআইডি কার্ডে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বর যুক্ত করতে চান তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স কপি/পাসপোর্ট কপি দিতে হবে।
১। জন্ম নিবন্ধন
নতুন ভোটার হওয়ার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন এবং প্রথম Documents হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই ডিজিটাল হতে হবে অর্থ্যাৎ ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে অনলাইনে সার্চ করলে যেন তা সঠিক পাওয়া যায়। জন্ম নিবন্ধনে বাংলা তথ্যের পাশাপাশি ইংরেজি তথ্যও থাকতে হবে। জন্ম নিবন্ধন যদি ইংরেজী করা না থাকে তাহলে এই ভিডিওটি দেখুন।
২। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
জন্ম নিবন্ধন সনদের মতই ভোটার হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হচ্ছে শিক্ষা সনদ। আপনার যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে যেমনঃ আপনি যদি S.S.C অথবা H.S.C পাশ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই সার্টিফিকেট কপি দিতে হবে। এছাড়াও J.S.C বা P.S.C সনদ থাকলেও তা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সার্টিফিকেটের সাথে জন্ম নিবন্ধন মিল থাকতে হবে। যদি মিল না থাকে তাহলে সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হবে। আবার যদি শিক্ষা সনদ না থাকে তাহলে পিতা ও মাতার আইডি কার্ডের সাথে জন্ম সনদের মিল অবশ্যই থাকতে হবে।
যারা মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেন বা করেছেন তারা সেই সার্টিফিকেট কপি জমা দিয়ে ভোটার হতে পারবেন।
৩। নাগরিক সনদ / চারিত্রিক সনদ
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/ মেয়র কর্তৃক এই নাগরিক সনদ/চারিত্রিক সনদ নিতে হয়। নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য এই সনদ বাধ্যতামূলক। জাতীয় পরিচয়পত্র শুধু মাত্র বাংলাদেশের নাগরিকের জন্য বিধায় আপনি এদেশের একজন নাগরিক তার একটি সনদ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
৪। পিতা ও মাতার এনআইডি কার্ড
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার সময় পিতা-মাতার NID নাম্বার যুক্ত করতে হয়। তাই নতুন ভোটার হতে অবশ্যই পিতা ও মাতার এনআইডি কার্ড প্রয়োজন হবে।
পিতা ও মাতার এনআইডি কার্ডে তাদের নাম আপনার সকল ডকুমেন্ট যেমন জন্ম নিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে। যদি পিতা বা মাতা মারা গিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই পিতা বা মাতার মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
৫। স্বামী/স্ত্রীর ভোটার আইডি কার্ড
বিবাহিত হলে স্ত্রী ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর আইডি কার্ড এবং স্বামী ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর আইডি কার্ড অবশ্যই দিতে হবে। যদি আইডি কার্ড না থাকে তাহলে বিবাহের কাবিননামা দিতে হবে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে যেহেতু কাবিননামা হয় না সেক্ষেত্রে তারা চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/মেয়র কর্তৃক প্রত্যয়ন জমা দিতে হবে।
৬। পূর্বে ভোটার হই নাই মর্মে অঙ্গীকার নামা
যদি বয়স বেশি হয়ে থাকে তাহলে অঙ্গীকার নামা দিতে হবে। কেননা বয়স বেশি হলে কমিশন ধরে নেয় যে , আপনি হয়তো এর আগে ভোটার হয়েছেন। এজন্য পূর্বে ভোটার হই নাই মর্মে আঙঈকার নামা লিখে দিতে হয়। অঙ্গীকারনামায় লেখা থাকে যে, আপনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আপনার নাম, পিতা ও মাতার নাম, গ্রামের নাম, উপজেলা এবং জেলার নাম। এছাড়া আপনি বাংলাদেশের কোথায় পূর্বে ভোটার হতে পারেন নি। যদি ভোটার হয়ে থাকেন তাহলে কমিশনের আইনুযায়ী শাস্তি মাথা পেতে নিবেন।
৭। রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার রিপোর্ট
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে নাগরিকের রক্তের গ্রুপ (Blood Group) তথ্য যুক্ত করতে হয়। রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার কাগজ না থাকলে নিকটস্থ কোন Pathology অথবা ক্লিনিকে থেকে আপনার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করিয়ে নিন। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট কপি আবেদনের সাথে যুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
৮। ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল, গ্যাস বিল)
বর্তমান ঠিকানা যাচাই করার জন্য বর্তমানে অবস্থান করেন এমন বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের কাগজ কিংবা টেলিফোন বিলের কাগজ জমা দিতে হবে।
আপনি যে এলাকায় বা যে ঠিকানায় ভোটার হতে চাচ্ছেন সেখানে বসবাসরত বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল কিংবা পানি বিলের কাগজ আবেদনের সাথে যুক্ত করতে হবে।
০৯। ট্যাক্স/কর পরিশোধের রশিদ
ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করার জন্য বাড়ির Holding Tax পরিশোধের রসিদ গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্ট। Holding Tax ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে পরিশোধ করা হয়ে থাকে। এই হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ বাড়ির যে কারো নামে থাকলেই চলবে। আবেদনকারীর নাম অথবা তার পিতা-মাতা বা পরিবারের কোন সদস্যের নামে রশিদ থাকলেই চলবে।
“নতুন ভোটার নিবন্ধন ২০২৪: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও আবেদন প্রক্রিয়া” শিরোনামে যে আলোচনা করা হলো তা অবশ্যই আপনাদের উপকারে আসবে। অনুরোধ রইলো, এই পোস্টটি আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও আরো কিছু যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানালে আমি চেস্টা করবো যথাযথ উত্তর দেওয়ার।
FAQs
নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?
নতুন ভোটার হতে বা ভোটার আইডি কার্ড করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার NID, নাগরিক সনদ, রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার কাগজ, বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ টেলিফোন বিলের কপি, জমির খাজনা রশিদ বা বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন লাগবে।
সার্টিফিকেটের সাথে পিতা/মাতার আইডি কার্ডের নাম ভুল আছে, করণীয় কি?
প্রথমত পিতা মাতার আইডি কার্ড সংশোধন করে নিতে হবে। যদি সংশোধন না করা যায় তাহলে নিজ সার্টিফিকেট এবং জন্ম সনদ মিল রেখে ভোটার হতে হবে।
নতুন ভোটার হতে টাকা লাগবে কি?
না, নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কোন প্রকার ফি দিতে হবে না। নতুন এনআইডি করার জন্য কোন ফি চার্জ করেনি নির্বাচন কমিশন। শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করতে যদি আপনি আবেদন করতে না পারেন তাহলে অনলাইনে কাজ করে এমন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে আবেদন করবেন। আর এই আবেদন করে দিতে দোকানদার ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পারিশ্রমিক নিতে পারে আপনার কাছে।
নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন অনলাইনে করতে হবে? না অফিসে গিয়ে করতে হবে?
নির্দিষ্ট সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম পূরন করে এলাকায় ক্যাম্প করে ভোটার করা হয়। ২০২২ সালের পর এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম হয়নি। তাই এখন ভোটার হতে চাইলে অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হতে হবে। অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন লিংক এখানে ক্লিক করুন