বয়স ১৮ হয়নি কিন্তু বয়স গোপন করে ভোটার হয়েছি । অনেক ছেলে-মেয়েই ভোটার হওয়ার বয়স না হওয়া এবং তাদের প্রয়োজনে বয়স গোপন রেখে নতুন ভোটার হয়। এদের মধ্যে কেউ গার্মেন্টসে চাকুরি নেওয়ার জন্য আবার কেউ বা পাসপোর্ট করে বিদেশে কাজের জন্য বয়স বাড়িয়ে দিয়ে নতুন ভোটার হয়ে থাকে।
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সটিক নিয়মে ভোটার হওয়ার আবেদন কিভাবে করবেন তা জানার জন্য ক্লিক করুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার পর আবেদন ফর্ম এবং এর সাথে কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে নতুন ভোটার হওয়া যায়।
ভোটার হওয়ার বয়স হতে হবে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব
একজন নাগরিক ১৮ বছর না হলে নতুন ভোটার হতে পারবে না। নতুন ভোটার হতে চাওয়া ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব না হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন ভোটার করে না। ‘নির্বাচন কমিশন ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশী নাগরিকদের পাশাপাশি ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করছে। কিন্তু এই সুযোগ ছিলো ২০২২ সালে যখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান ছিলো তখন। তবে তারা ছবি উঠে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম উঠবে না যতদিন না তাদের ১৮ বছর পূর্ন হয়। তাই তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পেলেও ভোটার না।
সার্টিফিকেট গোপন রেখে নতুন ভোটার হওয়া/ বয়স গোপন করে ভোটার
নির্বাচন কমিশনে ৯ বছরের চাকুরির অভিজ্ঞতার সূত্রে আমার পর্যালোচনায় ২ টি কারনে সার্টিফিকেট গোপন রেখে নতুন ভোটার হওয়ার প্রবনতাটা খুব বেশি।
১। পাসপোর্ট করার উদ্দেশ্যে (শ্রমিক ভিসায় বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য)
বর্তমানকালে শ্রমিক ভিসাতে পাসপোর্ট করার জন্য এনআইডি কার্ড থাকাটা বাধ্যতামূলক এবং ১৮+ হওয়াটা জরুরী। একজন ৯ম শ্রেনীর ছাত্রের বয়স তার সার্টিফিকেট অনুসারে ১৬ থেকে ১৭ বছর হয়ে থাকে। আর ১৮ বছর না হলে জাতীয় পরিচয়পত্র করা যায় না। এজন্য সার্টিফিকেট বাতিল করে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৩য় বা ৪র্থ শ্রেনী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করে ভোটার হয় এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে পাসপোর্ট করে।
এদেরকে যদি পরামর্শও দেওয়া হয় যে, আপনি যা করছেন ভুল করছেন তারা তাদের কাজটাকেই সঠিক মনে করে। কেননা সেই ব্যক্তিটি হয়তো বা দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে দালালকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করেছে।
এখন কথা হচ্ছে, উক্ত ব্যাক্তিটি বয়স গোপন করে ভোটার হলো এবং সে পরবর্তীতে বিদেশে চলে গেলো কিন্তু কোন কারনে সে ২/৫ বছর পর দেশে ফিরে এসে সে আর বিদেশে গেলো না, তখন???
পরবর্তীতে দেশেই যখন কিছু একটা করতে যাবে তখন প্রয়োজন হবে সার্টিফিকেট এবং এনআইডি কার্ড। আর এনআইডি কার্ডের সাথে সার্টিফিকেটের বয়স না মেলাতে তার সার্টিফিকেট বাতিল বলে গণ্য হবে। তখন যদি সার্টিফিকেট অনুসারে আইডি কার্ড সংশোধন করতে দেয় নির্বাচন কমিশন আইডি কার্ড কখনই সংশোধন করে দিবে না। এভাবেই সে বিপদে পড়বে।
২। গার্মেন্টেসে চাকরির নেওয়ার জন্য
গার্মেন্টস সেক্টরে ১৮ বছর না হলে এখন আর চাকুরিতে নেয় না। আর ১৮ বছর প্রমানের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। এখন গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ে রয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিতে তাকে কর্ম করার জন্য গার্মেন্টেসে যেতে হয়। বয়স ১৮ বছর না হওয়ার কারনে যেহেতু গার্মেন্টস চাকুরিতে নেয় না তাই একরকম বাধ্য হয়েই বয়স গোপন রেখে নতুন ভোটার হয়ে থাকে। তিনি পড়াশোনা কন্টিনিউ করলেও সার্টিফিকেটে বয়স না হওয়ার কারনে বয়স গোপন করে ভোটার হয়ে নেয়।
সাময়িক প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে এরা যে কত বড় ভুলের মধ্যে চলে যায় তা তখন জানতে পারে না তারা। পরবর্তীতে যখন ভাল কোন চাকুরির জন্য বা একটু প্রমোশনের জন্য সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় তখন তার মাথায় হাত। তার অর্জিত সার্টিফিকেটের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স কম বেশি হওয়াতে সার্টিফিকেটর কোন মূল্য থাকে না। আর তখন যদি নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করে সাথে সাথে নির্বাচন কমিশন আবেদন বাতিল করে দেয়।
ভোটার আইডি কার্ডের সার্ভার শক্তিশালী সার্ভার কেন?
অনলাইনে আবেদন করে নতুন ভোটার হওয়ার প্রসেস করার পর পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করে নতুন ভোটার হতে হয়। বায়োমেট্রিক হলো, ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশ স্ক্যান, সিগনেচার, এবং ছবি উঠিয়ে ভোটার হতে হয়। বর্তমান পৃথিবীতে আঙ্গুলের ছাপ হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রামান্য দলিল একজন মানুষকে সনাক্ত করার জন্য।
শেষকথা
সাময়িক সুবিধার জন্য ভবিষ্যতের পুরো লাইফটা নস্ট করবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকাভূক্ত হোন।