জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩: নির্বাচন কমিশনের পর্যালোচনা ও প্রাসঙ্গিকতা
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকবে না কি সরকারের সুরক্ষা সেবা বিভাগের হাতে ন্যস্ত হবে, তা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসি আগামী ১২ জানুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইসির সংস্থাপন শাখা থেকে জারি করা অফিস আদেশ অনুসারে, বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩’ এর বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এ আইন প্রণয়ন করে, যেখানে বলা হয়েছিল, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই থাকবে।
এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরের বিতর্ক
এনআইডি কার্যক্রমকে ইসি থেকে সরকারের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন একাধিকবার এনআইডি হস্তান্তরের বিরোধিতা করে বলেছেন,
“ইসি থেকে এনআইডি কার্যক্রম সরানো হলে ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা এবং এনআইডি সঠিকতা নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।”
ইসি দীর্ঘ সময় ধরে এনআইডি সিস্টেমটি ডেভেলপ করেছে। সেখান থেকে এটি সরানো হলে নাগরিক সেবা এবং তথ্য নিরাপত্তা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসির অভ্যন্তরীণ মতামত
ইসি কর্মকর্তারা মনে করেন, এনআইডি কার্যক্রম সরকারের অন্য কোনো বিভাগের অধীনে গেলে নতুন লোকবল তৈরি করতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থের প্রয়োজন হবে। এছাড়া, অভিজ্ঞতা ছাড়া নতুন কর্মীদের জন্য নাগরিক সেবা প্রদান করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
নাগরিক তথ্যের নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়বে, যা দেশের ডেটা সুরক্ষার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কর্মচারীদের আন্দোলন
এনআইডি প্রকল্পের সাথে যুক্ত হাজারো কর্মী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন,
“এনআইডি কার্যক্রমে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো অব্যবহৃত থেকে যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
ইসি বৈঠকের অন্যান্য আলোচ্য বিষয়
ইসির বৈঠকে এনআইডি বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে:
- বিশেষ তথ্য ফরম ব্যবহার: চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ এলাকায় ভোটার নিবন্ধনের জন্য ‘ফরম-২ এর অতিরিক্ত তথ্য’ ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত।
- ইসি সচিবালয়ের জনবল ও সরঞ্জাম হালনাগাদ: সচিবালয়ের জনবল কাঠামো এবং সরঞ্জাম উন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ।
‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩ নিয়ে ইসির পর্যালোচনা শুধু একটি আইন বিশ্লেষণ নয়, বরং নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংশোধন বা বাতিলের দাবিতে সুশীল সমাজের মতামত বিবেচনা করা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।