ভূমির ডিজিটাল সার্ভে: সামাজিক অস্থিরতা দূর

ভূমির ডিজিটাল সার্ভে

বাংলাদেশে জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা থেকে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ বহুদিনের। জমির বাউন্ডারি নিয়ে বিরোধ, মামলা-মোকদ্দমা এবং সামাজিক সহিংসতার কারণে বহু মানুষের ভোগান্তির ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এই সমস্যাগুলোকে চিরতরে দূর করতে এলজিআরডি ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম, যা EDLMS নামে পরিচিত।

ডিজিটাল সার্ভে: কীভাবে কাজ করবে?

ডিজিটাল ভূমি জরিপে জমির সঠিক সীমানা এবং মালিকানাসহ জমির খুঁটিনাটি তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে জমির মালিকরা অনলাইনে সহজেই তাঁদের জমির কাগজপত্র, পর্চা ও খতিয়ান ঘরে বসেই পেতে পারবেন। ফলে মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা কমে যাবে এবং ফৌজদারি মামলার হারও কমবে। এতে সমাজে জমি নিয়ে অস্থিরতা ও বিরোধের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও সুবিধা

ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে জমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ করা সহজতর হবে এবং ভুল তথ্যের কারণে যেসব বিরোধের সৃষ্টি হয়, তা কমে আসবে। ভূমির মালিকানা যাচাই করার জন্য মানুষকে আর জায়গায় জায়গায় ছুটতে হবে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত এবং সঠিক তথ্য পাওয়ার সুযোগ থাকায় সম্পত্তি সংরক্ষণ এবং বিরোধ সমাধানে এটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এছাড়া, স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের ফলে যারা ভূমি সংক্রান্ত কোনো ধরনের সেবা নিতে চান, তাঁরা এটি অনলাইনে দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারবেন।

ভূমি ডিজিটাল সার্ভে: নারায়ণগঞ্জে পাইলট প্রকল্প

এ প্রকল্পটির পাইলট কার্যক্রম হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে এ প্রকল্পটি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট ৩৮৩ কোটি টাকা

কীভাবে ভূমি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা সমাজে পরিবর্তন আনবে?

  1. বিরোধ ও মামলার সংখ্যা কমানো: ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে সঠিক ভূমি তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় মামলার সংখ্যা কমে আসবে। এতে সময় এবং অর্থের অপচয়ও হ্রাস পাবে।
  2. সহিংসতা হ্রাস: জমির সীমানা ও মালিকানা নিয়ে বিরোধে যে সহিংসতার সৃষ্টি হয়, তা কমে যাবে। জমি নিয়ে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।
  3. আর্থিক সাশ্রয়: ভূমি মালিকরা অনলাইনেই তাঁদের সম্পত্তির তথ্য পেয়ে যাবেন, যার ফলে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে না।
  4. স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি: ভূমির যাবতীয় তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ হওয়ায় জমির কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়া বা জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকবে না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নতুন এ প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হবে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ভূমি ডিজিটাল জরিপ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এতে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সম্পত্তি রক্ষায় জনগণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top