অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার নিয়ম । Online NID Registration

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন

যারা এখন পর্যন্ত ভোটার হয়নি কিন্তু ভোটার হওয়ার বয়স হয়েছে তারা খুব সহজে অনলাইনে নতুন ভোটার হতে পারবে। নতুন NID Card করার জন্য আপনি কিভাবে নিজে নিজেই অনলাইনে নতুন ভোটার কার্ডের আবেদন করার নিয়ম (Online NID Registration) এই ব্লগ পোস্টে তার বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এছাড়াও আবেদন করার পর আবেদন ফরমে কার স্বাক্ষর নিতে হবে, কোথায় স্বাক্ষর নিতে হবে, নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন ফরম কোথায় জমা দিতে হবে, নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি কাগজ লাগবে এবং সর্বশেষ নতুন ভোটারের ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ স্ক্যান ও স্বাক্ষর দিয়ে কিভাবে নতনু ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করবেন তার এ টু জেট আলোচনা থাকবে এই ব্লগ পোস্টে।

আপনি এই ব্লগ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়া শেষ করলে নিজে নিজেই নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন, পরিবারের কেউ ভোটার হতে চাইলে অথবা বন্ধু/বান্ধবী ভোটার হতে চাইলে আপনি হেল্প করতে পারবেন।

  • নতুন ভোটার হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে ১৮ বছর পূর্ন হতে হবে। বাড়ি বাড়ি হালনাগাদ কার্যক্রম ২০২২ সালে ১৬ বছর পর্যন্ত ভোটার করেছে নির্বাচন কমিশন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

একটি নতুন ভোটার ২ টি পদ্ধতিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

  1.  অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হওয়া এবং
  2.  উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নিবন্ধন ফরম-২ সংগ্রহ করে ভোটার হওয়া।

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে

নতুন ভোটার হতে বা ভোটার আইডি কার্ড করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার NID, নাগরিক সনদ, রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার কাগজ, বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ টেলিফোন বিলের কপি, জমির খাজনা রশিদ বা বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়।

আরো পড়ুনঃ 

নতুন এনআইডি (NID) করতে যা যা লাগে নিচে লিস্ট আকারে দেওয়া হলো-

  • জন্ম নিবন্ধন ফটোকপি
  • পিতা ও মাতার এনআইডি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি (যদি থাকে)
  • স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কপি (বিবাহিতদের জন্য)
  • পূর্বে ভোটার হই নাই মর্মে অঙ্গীকার নামা। (বেশি বয়স্ক ভোটারের ক্ষেত্রে)
  • মেয়র/চেয়ারম্যান/ কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব/চারিত্রিক সনদপত্র
  • রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার রিপোর্ট

ঠিকানা প্রমানের জন্য

  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ বিল/পানি বিল/গ্যাস বিল)
  • ট্যাক্স/কর পরিশোধের রশিদের ফটোকপি

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার নিয়ম

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে Name, Date of Birth, Mobile Number দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর পরবর্তী ধাপ গুলো ফিলাপের মাধ্যমে নতুন ভোটারের আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলে NID Application Form Download করতে হয়। এরপর ডাউনলোড করা নতুন ভোটারের ফরমটি প্রিন্ট করে শনাক্তকারী এবং যাচাইকারীর এনআইডি নাম্বারসহ তাদের স্বাক্ষর ও সীল যুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়।

এরপর আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে উপস্থিতির তারিখ জানানো হবে। সেই তারিখে নির্বাচন অফিসে উপস্থিত থেকে ছবি, ফিঙ্গার, আইরিশ এবং স্বাক্ষর দিতে হবে। ভোটার হওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আপনাকে নিবন্ধন স্লীপ বা ফরম নাম্বার সম্বলিত রশিদ দিবে। যা আপনি আপনার কাছে যত্ন সহকারে রেখে দিবেন। কেননা পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় নিবন্ধন স্লীপ জমা দিয়ে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উঠিয়ে নিতে হয়।

এছাড়াও ছবি উঠার ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বারে এনআইডি নাম্বার সম্বলিত একটি ম্যাসেজ আসবে ১০৫ নাম্বার থেকে। মেসেজটি পাওয়ার পর এনআইডি নাম্বার এবং আপনার জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইন থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।

nid download
অনলাইন থেকে নতুন ভোটার আইডি ডাউনলোড কপি

ডাউনলোডকৃত এই পিডিএফ কপিটি প্রিন্ট করে লেমেনিটিং করে নিলেই হয়ে গেলো আপনার ভোটার আইডি কার্ড। পরবর্তীতে স্মার্ট আইডি কার্ড অফিসে আসলে নির্বাচন অফিস বিতরন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জেনে নিন, আপনার স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরি হয়েছে কিনা?

এখন চলুন, অনলাইনে ভোটার আবেদন প্রক্রিয়া জেনে নেওয়া যাক।

অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের services.nidw.gov.bd এই ওয়েবলিংকে প্রবেশ করতে হবে এবং নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে হবে।

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন
ওয়েবসাইটটি ওপেন হওয়ার পর আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন

nid একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

এখানে আপনার নাম ইংরেজিতে, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা প্রবেশ করে বহাল বাটনে ক্লিক করুন।

এনআইডি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন

এখানে আপনার মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে এবং আবেদন করার সময় আপনার কাছে আছে এমন মোবাইল নাম্বরটি দিতে হবে।

অবশ্যই মনে রাখবেন যে, আপনার বা যার আবেদন করছেন তার নিজের মোবাইল নম্বর অবশ্যই দিতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে অ্যাকাউন্টে লগইন করতে, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে এবং ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে মোবাইল নাম্বারটি প্রয়োজন হবে।

nid অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন যাচাইকরন কোড

আপনার মোবাইলে ১০৫ নাম্বার থেকে প্রেরিত ৬ ডিজিটের যাচাইকরন কোডটি বসিয়ে বহাল বাটনে ক্লিক করুন।  এই কাজটা করার জন্য আপনাকে ৬০ সেকেন্ড সময় দেওয়া হবে। তবে চিন্তার কিছু নেই, যদি যাচাইকরন কোডটি মোবাইলে না যায় তবে পুনরায় পাঠান বাটনে আবার ক্লিক করুন।

nid account registration password

এখন আপার এ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ইউজারনেম (Username) ও পাসওয়ার্ড (Password) সেট করতে হবে। ইউজারনেম>পাসওয়ার্ড>পুনরায় পাসওয়ার্ড লিখুন> এরপর বহাল বাটনে ক্লিক করবেন।

অবশ্য মনে রাখার মত ইউজারনেম (Username) ও পাসওয়ার্ড (Password) সেট করবেন, যাতে পরবর্তীতে এই ইউজার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে, Nid Card Download, Nid Correction সহ অন্যান্য সেবার পাশাপাশি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা নিজেই চেক করতে পারেন।

  • ইউজারনেম ইংরেজী অক্ষরের সাথে সংখ্যা দিবেন। যেমনঃ Muslim360
  • পাসওয়ার্ড অবশ্যই ৮ সংখ্যার হতে হবে (অবশ্যই মনে রাখার মত পাসওয়ার্ড দিবেন, প্রয়োজনে ডাইরীতে লিখে রাখবেন)
  • Username Already Exist (ইউজারনেম ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে) এমন সমস্যা দেখালে নতুন করে ইউজারনেম দিন।

এনআইডি প্রোফাইল

এরপর আপনার প্রোফাইল ওপেন হবে। এখান থেকে আপনি মার্ক করা যেকোন প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করুন।

nid profile

এরপর এই পেজটি ওপেন হওয়ার পর উপরের ডান পাশ থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করুন। এডিট বাটনে ক্লিক করার পর নিচের মত একটি পেইজ আসবে। এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য এবং ঠিকানা সঠিকভাবে লিখতে হবে।

ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য

ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য

ব্যক্তিগত তথ্যের এখানে আপনার নাম বাংলায় লিখতে হবে। এরপর ভোটারের লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্মস্থান সিলেক্ট করতে হবে। এছাড়া পিতার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখতে হবে, পিতার আইডি নাম্বার লিখতে হবে। যদি পিতা মৃত হয় তবে মৃত বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে মৃত্যুর সন লিখে দিতে হবে।

এরপর মাতার নাম বাংলায় ও ইংরেজীতে লিখতে হবে। মাতার আইডি নাম্বার লিখতে হবে। মাতা যদি মৃত হয় তবে মৃত বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে মৃত্যুর সন লিখে দিতে হবে।

এরপর ভাইবোনের তথ্য না দিলেও চলবে।

এরপর স্বামী/স্ত্রীর তথ্যঃ বৈবাহিক অবস্থা অবশ্যই সিলেক্ট করতে হবে। বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর নাম লিখে দিতে হবে এবং স্বামী/স্ত্রীর আইডি নাম্বার যদি থাকে লিখে দিবেন।

এরপর অন্যান্য তথ্য অপশনে ক্লিক করলে নিচের পেজটি ওপেন হবে।

ভোটারের অন্যান্য তথ্য

এই অংশে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা এবং ধর্ম অবশ্যই সিলেক্ট করতে হবে। বাকি ঘরগুলো পূরন করতেও পারেন, না করলেও সমস্যা নেই।

এরপর ঠিকানা অংশে ক্লিক করুন।

ভোটারের বর্তমান ঠিকানা

ভোটারের স্থায়ী ঠিকানা

ঠিকানা অংশে প্রথমেই অবস্থানরত দেশের নাম সিলেক্ট করুন। আপনি যদি দেশের বাইরে থেকে ভোটার হতে চান তাহলে সেই দেশটি সিলেক্ট করুন। আর আপনি যদি বাংলাদেশে অবস্থান করে থাকেন তাহলে অবশ্যই Bangladesh সিলেক্ট করুন।

এরপর ভোটার ঠিকানা অংশে বর্তমান ঠিকানা সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার বর্তমান ঠিকানা ধাপে ধাপে সঠিকভাবে সিলেক্ট করুন। যেমনঃ বিভাগ, জেলা, উপজেলা, আর.এম.ও, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম/রাস্তা, বাসা হোল্ডিং, পোস্ট অফিস, পোস্ট কোড। এখানে পোস্ট অফিস যদি না থাকে তবে এই ঘরটি ফাঁকা রাখুন। ফরমটি যখন ডাউনলোড করে প্রিন্ট করবেন তখন কলম দিয়ে পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড লিখে দিবেন।

এরপর ভোটার এরিয়া সিলেক্ট করুন। সাধারনত গ্রামের নামটাই ভোটার এরিয়া হয়ে থাকে।

এরপর আপনার স্থায়ী ঠিকানা অংশ ফিলাপ করুন। বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি ভিন্ন ভিন্ন হয় তাতেও সমস্যা নেই। আপনি ভিন্ন ভিন্নই সিলেক্ট করে দিবেন।

পরবর্তী

ঠিকানা অংশ ফিলাপ করার পর উপরের ডান কোনার পরবর্তী বাটন ক্লিক করুন।

ভোটার হওয়ার কাগজপত্র কি কি

এখানে বলেছে যে, অনলাইনে আপনাকে কোন কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে না। তাই পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ভোটার নিশ্চিত

এবার সবকিছু ঠিক আছে মর্মে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

ভোটার ফরম ডাউনলোড

এবার ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার ভোটার হওয়ার ফরমটি ডাউনলোড করে নিন।

ভোটার নিবন্ধন ফরম
অনলাইন ভোটার নিবন্ধন ফরম (প্রথম পাতা)                                                     
ভোটার নিবন্ধন ফরম ২য় পাতা
অনলাইন ভোটার নিবন্ধন ফরম (২য় পাতা)                                                     

ডাউনলোড করা এই ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ পাতা প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর ৩৪ নং ক্রমিকে শনাক্তকারীর NID নম্বর লিখে ৩৫ নং ক্রমিকে তার স্বাক্ষর নিতে হবে।

শনাক্তকারী হিসেবে পিতা, মাতা, ভাই, বোন, পাড়া প্রতিবেশী যেকেউ হতে পারে।

এরপর ৪০নং এবং ৪১ নং ক্রমিকে যাচাইকারীর নাম ও যাচাইকারীর NID নম্বর লিখতে হবে এবং ৪২ নং ক্রমিকে তার সীল সহ স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হবে।

যাচাইকারী হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি যেমন মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়রদের দ্বার এই অংশ ফিলাপ করে নিতে হবে।

ব্যাস, আপনার নতুন ভোটারের ফরম ফিলাপের কাজ শেষ।

সর্বশেষ, ফরমটির সাথে ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগে সেই কাগজগুলো নিয়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে ভোটার হতে হবে।

বিষয়টি আরো ভালভাবে জানার জন্য ভিডিওটি দেখুন

FQAs

১। ভোটার হওয়ার কতদিন পর আইডি কার্ড পাওয়া যাবে?

উত্তরঃ নতুন ভোটার হওয়ার ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর অনলাইন থেকে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করা যায়।

২। নতুন ভোটার হওয়ার পর স্মার্ট কার্ড পাবো কি?

উত্তরঃ না, স্মার্ট কার্ড আপাতত পাওয়ার সুযোগ নেই। আপাতত অনলাইন থেকে ডাউনলোডকৃত পেপার লেমিনেটেড কার্ড পাবেন। পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড আসলে আপনার এলাকায় গিয়ে বিতরণের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।

৩। অনলাইনে ভোটার হওয়া যায় কি?

যায়, অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করা যায়। এরপর নতুন ভোটারের আবেদন ফরম উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে ভোটার হতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top