ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়মাবলী - বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা আপডেট করার পদ্ধতি

বিভিন্ন কারনবশত ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিভাবে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয় তার সঠিক নিয়ম না জানার কারনে সহজে এনআইডির ঠিকানা পরিবর্তন সম্ভব হয় না। এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং এই নিয়ম অনুসরণ করলে আপনার Nid Card এর Address Change করতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা

(১) ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানা

এনআইডি কার্ডের বা ভোটার কার্ডের ২টি ঠিকানা রয়েছে, বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা। বর্তমান ঠিকানা আইডি কার্ডে দৃশ্যমান থাকে। অর্থ্যাৎ ভোটার আইডি কার্ডের পিছন পার্টে যে ঠিকানা দেওয়া থাকে তা হচ্ছে বর্তমান ঠিকানা।

(২) ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা

ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা ইসির ডাটা বেজে রক্ষিত থাকে। যা আপনি অনলাইনে আপনার আইডি কার্ড যাচাই করলে দেখতে পারবেন। স্থায়ী ঠিকানা দেখার জন্য এনআইডি ডাটা বেজে আপনার এ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনি দেখতে পারবেন অথবা নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা যাবে।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। কিন্তু ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় না। ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য নির্ধারিত ফরম পূরন করে নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত তথ্যঃ নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ

অন্যান্য তথ্যঃ রক্তের গ্রুপ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্বামী/স্ত্রীর নাম, ড্রাইভিং বা পাসপোর্ট নাম্বার ইত্যাদি।

ঠিকানাঃ বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা।

মনে রাখা জরুরী যে, ঠিকানা সংশোধন এবং ঠিকানা পরিবর্তন একটা বিষয় না। ঠিকানা সংশোধন বলতে, আপনার যদি গ্রামের নাম ভুল থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু যদি পুরো ঠিকানা যেমন: গ্রাম, ডাকঘর, পোস্ট কোড, উপজেলা পরিবর্তন করতে চান তাহলে অনলাইনে আবেদন করা যাবে না।

ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম

নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ফরম-১৩ পূরন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদন জমা দিতে হবে।

আবেদনপত্রের সাথে নিন্মোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ

১। আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।

২। যে এলাকায় স্থানান্তর হবেন সেই এলাকার সিটি কর্পোরেশন/পৌর সভার মেয়র/ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র।

৩। ইউটিলিটি বিলের অনুলিপি (বিদ্যুৎ/পানি বিল/গ্যাস বিল ইত্যাদি)।

৪। বাড়ি ভাড়া রশিদ/চৌকিদারি কর রশিদ/ পৌরকর রশিদ।

নোটঃ ফরম-১৩ এর ২য় পাতায় আবেদনকারীকে সনাক্তকারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট মেয়র/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/মেম্বারের এনআইডি নাম্বারসহ নাম ও স্বাক্ষর এবং তার সীল দিতে হবে।

বিঃদ্রঃ ভোটার এলাকা স্থানান্তর হয়ে গেলে নতুন এনআইডি কার্ড প্রদান করা হয় না। যদি কেউ স্থানান্তরিত এলাকার নতুন কার্ড নিতে চায় তাহলে তাকে ২৩০ টাকা সরকারি ফি পরিশোধ করে রিইস্যুর আবেদন করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর বা বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন ফরম-১৩ ডাউনলোড

এই ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর সঠিকভাবে পূরন করে নির্দিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্ত করে যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে স্বশরীরে জমা দিতে হবে।

বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তনের ফরম পূরন করার নিয়ম

ভোটার এলাকা স্থানান্তর বা বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন ফরম ১৩ যদি সঠিকভাবে ফিলাপ না করেন তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল হতে পারে। তাই সঠিকভাবে ফিলাপ করার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখুনঃ

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম Nid Card Permanent Address Change

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য সংশোধন ফরম-২ পূরন করতে হবে। এরপর এই ফরম-২ এর সাথে প্রামান্য নথিপত্র সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে।

সংশোধন ফরম-২ পিডিএফ কপিটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন ফরম ফিলাপ পদ্ধতি

এনআইডি কার্ডের বা জাতীয় পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের ফরমটি যথাযথভাবে ফিলাপ করতে হবে। ফরমের ক্রমিক ১ এর (ক) অংশে নিজের নাম লিখতে হবে, ক্রমিক ১ এর (খ) অংশে জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, ক্রমিক ৩ এর (ছ) অংশে জাতীয় পরিচয়পত্রে বিদ্যমান তথ্যের কলামে ভোটার আইডি কার্ডে থাকা বিদ্যমান ঠিকানা লিখতে হবে এবং চাহিত সংশোধিত তথ্যের কলামে এখন যে ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা করতে চাচ্ছেন সেই ঠিকানা লিখতে হবে।

স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন নিয়ম
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের ফরম ফিলাপের সঠিক পদ্ধতি

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে যে সকল কাগজপত্র লাগে

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য নিচের কাগজগুলো লাগবে, যা ফিলাপকৃত ফরমের সাথে স্ট্যাপলিং করে উপজেলা / থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে স্বশরীরে জমা দিতে হবে।

  1. অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  2. চেয়ারম্যান / কাউন্সিলর -এর প্রত্যয়ন/নাগরিক সনদ
  3. ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস) বিলের কপি/ জমির খতিয়ান/ খাজনা প্রদানের রশিদ
  4. পাসপোর্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন ফি পরিশোধ

ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন এর জন্য নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ফি ১১৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সংশোধনী ফি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। এছাড়াও ব্যাংক চালানের মাধ্যমেও পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংক চালান করার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে চালানের কোড জেনে নিতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া সুবিধা বিধায় আপনি বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করবেন। এজন্য বিকাশ এ্যাকাউন্ট থেকে পে বিল অপশন>এনআইডি সার্ভিস>আবেদনের ধরন সিলেক্ট>এনআইডি নাম্বার দিয়ে বিকাশে পেমেন্ট করতে হবে। বিকাশ পেমেন্ট করার সময় ৬ টাকা বিকাশ চার্জ কর্তন করবে। আপনি নিজে পেমেন্ট না করতে পারলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তাদের বললে তারা পেমেন্ট করে দিতে সাহায্য করবে।

এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার আবেদন জমা এবং সংশোধন

সংশোধনী আবেদন ফরম এবং এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিস বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে আসলেই কাজ শেষ। এরপর ১ সপ্তাহ হতে ২ সপ্তাহের মধ্যে আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে ১০৫ নাম্বার থেকে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, আপনার এনআইডি কার্ডটি সংশোধন হয়ে গেছে অনলাইন সিস্টেম হতে অথবা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে নতুন এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে নিন। ম্যাসেজটি পাওয়ার পর আপনি আপনার অনলাইন ডাটাবেজে প্রবেশ করে ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে নতুন আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। এরপর ডাউনলোড করা এনআইডি কার্ডের পিডিএফ কপিটি প্রিন্ট করে লেমিনিটিং করে নিলেই আপনার কাজ শেষ। হাতে পেয়ে গেলেন নতুন এনআইডি কার্ড।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top